কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার এক গ্রামে এক নারীকে (২৫) ঘরে ঢুকে গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণের অভিযোগে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিলেছে—এই নারী প্রকৃত অর্থেই পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, কিছুদিন আগে তার বাবার বাড়ির লোকজন ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদে ধার নিয়েছিলেন। ওই ঋণ পরিশোধ না করায় বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত ১১টার দিকে ফজর আলী টাকা চাইতে এসে বাড়িতে কাউকে না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।
ধর্ষণের পরে আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে ছুটে আসেন এবং ফজর আলীকে আটক করে মারধর করেন। ভুক্তভোগী জানান, এ সময় কয়েকজন তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করেন এবং সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় পুলিশ যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তারাই এই ভিডিও ধারণ ও প্রচারের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।
ভুক্তভোগীর ছোট ভাই জানান, তাদের পরিবারের সঙ্গে ফজর আলীর আর্থিক লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। সময়মতো টাকা ফেরত দিতে না পারায় ফজর আলী হুমকি দিচ্ছিলেন এবং ওই দ্বন্দ্ব থেকেই এই ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় বাড়িতে মা-বাবা ছিলেন না, তিনি নিজেও ছিলেন বাইরে। শুধু তার বোন ও ছোট দুই শিশু ছিল ঘরে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এলাকার আরেক ব্যক্তি শাহ পরানের সঙ্গে ফজর আলীর দ্বন্দ্ব থাকায়, সেই সুযোগে শাহ পরানই কয়েকজন লোক পাঠিয়ে তার বোনকে মারধর ও ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ভাইরাল করা হয়।
মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, “ঘটনার পর কেউ কেউ এটিকে পরকীয়া বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ পাইনি। আমাদের তদন্তে স্পষ্ট, এই নারী গুরুতর যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।”
স্থানীয় একজন প্রতিবেশী জানান, তিনি বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়ি থেকে চিৎকার শুনে প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন। দরজা ভাঙা অবস্থায় তিনি ওই নারীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। তখনই সবাই বুঝতে পারেন, ভয়াবহ একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
দুটি মামলা, গ্রেপ্তার ৫
ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী শুক্রবার মুরাদনগর থানায় প্রথম মামলা করেন। এরপর রোববার তিনি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। দ্বিতীয় মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানান, ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীকে রবিবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সময় গণপিটুনিতে তার হাত-পা ভেঙে যায়, বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা হলেন—মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী একসময় ছাত্রলীগের একটি ওয়ার্ড কমিটিতে নেতৃত্ব দিতেন। বর্তমানে তিনি নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে, স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধান আসামি ফজর আলী এলাকায় পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী এবং জুয়ার আসর চালিয়ে বহু পরিবারকে নিঃস্ব করেছেন। তিনি রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপির সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়েছেন, তবে কোনো দলীয় পদ-পদবিতে নেই।
আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগী পরিবার
তিতাস নদীর তীরে অবস্থিত ওই নারীর বাবার বাড়িতে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী নারী দোষীদের কঠোর শাস্তি চান, যদিও তার প্রবাসী স্বামী তাকে মামলা তুলে নিতে বলছেন। তবে এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে কেউ মামলা না করার জন্য চাপ দিচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।